-->

রবীন্দ্রনাথের 'ঘরে বাইরে’ উপন্যাসের ভাষা ও শৈলী

 

রবীন্দ্রনাথের 'ঘরে বাইরে’ উপন্যাসের ভাষা ও শৈলী

ঘরে বাইরে উপন্যাসের ভাষা ও শৈলী

ঘরে বাইরেউপন্যাসের রীতি বৈশিষ্ট্য বাংলা সাহিত্যে নতুন। চতুরঙ্গউপন্যাসে শ্রীবিলাসের মুখেই সমস্ত কাহিনিকে প্রকাশ করেছিলেন তিনি। সেখানে রবীন্দ্রনাথ নিজেকে সরিয়ে রাখলেন। একটি চরিত্র বিশ্লেষণ করলো অন্য চরিত্রকে। সমগ্র ঘটনাকে। ঘরে বাইরে’-তে তিনটি চরিত্র তাদের আত্মসমীক্ষার মধ্য দিয়ে সমগ্র কাহিনিকে বর্ণনা করেছে ।

উল্লেখ করা প্রয়োজন উপন্যাসে ঔপন্যাসিক কোন বিবরণ না দিয়ে, উপন্যাসের চরিত্ররা তাদের নিজেদের কথা যখন বলেন, পাঠক কয়েকটি প্রশ্নে উপস্থিত হয়ে থাকেন। যেখানে নানা চরিত্রের কথাবার্তাগুলি প্রায় একই রকম হয়ে থাকে। ভাষা প্রয়োগের ক্ষেত্রেও খুব একটা হেরফের ঘটে না। পাঠক ভাবতে পারেন (ঘরে বাইরে-এর ক্ষেত্রে) বিমলা যে ভাষাতে কথা বলছে, সন্দীপের মতো ভণ্ডও একই ভাষায় কথা বলছে। নিখিলেশও অনেকটা একই। এটা কীভাবে সম্ভব। আসলে গল্প-উপন্যাস-নাটকের মধ্যে আমরা নিজেদের কল্পনাকে কিছুটা যুক্ত রাখতে চাই। আমাদের মনে হয় ভাষা, কাঠামো এক হলেও চরিত্রের স্বাতন্ত্র্য অনুসারে সে ঐ ভাষা প্রয়োগ করছে। আর তা উপন্যাসের ধর্মকে ক্ষুণ্ণ করছে না।

রচনায় লেখক তার মৌলিকতা রাখবেন এটাই স্বাভাবিক। পাঠক লেখকের এই স্বাধীনতা ভোগ করে। এর বিরুদ্ধে নালিশ খাটে না। উপন্যাসের ক্ষেত্রে এই রীতির চলন বেশি নয়। উপন্যাস বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লেখা হয় লেখকের জবানিতে ।

উল্লেখ্য যে ঘরে বাইরে’-তেই রবীন্দ্রনাথ প্রথম চলিত ভাষারীতিকে ব্যবহার করেছেন। এই উপন্যাসে একাকার হয়ে গেছে কবিতার পরিমিত আবেগ এবং বাক্‌নৈপুণ্যের শৈল্পিক প্রতিভাস। এই রীতিকে রবীন্দ্রনাথ বজায় রেখেছিলেন শেষের কবিতা’, ‘চার অধ্যায়উপন্যাসের মধ্যেও। রবীন্দ্র উপন্যাসের মধ্যে ভাষা প্রয়োগের জন্যই একটা কাব্যিক পরিবেশ বারে বারে তৈরি হতো।

ঘরে বাইরেউপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ ক্রিয়াপদকে সংক্ষিপ্ত করেছেন। সর্বনাম পদের মধ্যমাক্ষর লোপ ঘটিয়েছেন। তৎসম শব্দকে অধিক প্রয়োগ করেছেন। গদ্যের মধ্যে অলঙ্কারকে ব্যবহার করে এক অসামান্য কাব্যিক বোধের জন্ম দিয়েছেন। ফলে সেখানে যে ভাষা তৈরি হয়েছে তা ঠিক মুখে মুখে প্রচলিত চলিত ভাষা নয়। ঘরে বাইরেউপন্যাসের ভাষার মধ্যে একটা ক্ল্যাসিক সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়েছে। এর গদ্যে রয়েছে অনির্বচনীয় সৌন্দর্য, সেটকুমার্স। এই উপন্যাসের পরে আর কোথাও সাধু রীতিকে ব্যবহার করলেন না করি। চলিতের জন্যই এই উপন্যাসে গল্পের গতিবেগ বেড়েছে। ভাষা বিষয়কে সুন্দর করেছে।




বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের আরো নোট পেতে সাহিত্য বাংলা WhatsApp Group-এ যুক্ত হন